মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৪ অপরাহ্ন

অর্পিত সম্পতির মামলা ট্রাইব্যুনাল ছাড়া অন্য আদালতে করা যাবে না : হাইকোর্টের রায়

অর্পিত সম্পতির মামলা ট্রাইব্যুনাল ছাড়া অন্য আদালতে করা যাবে না : হাইকোর্টের রায়

স্বদেশ ডেস্ক:

বাংলাদেশে অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক যেসব মামলা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ছাড়া অন্য আদালতে চলমান ছিল সেগুলো বাতিল করেছে হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত একটি রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (৭ জুন) আদালত এ রায় দিয়েছে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত বলেন, ২০০১ সালের অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের তিনটি ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা দুটি রিট পিটিশনের শুনানি শেষে এ রায় আসে।

১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় যারা এদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যায় তাদের সম্পত্তিকে শত্রু সম্পতি হিসেবে ঘোষণা করে তৎকালীন সরকার। পরে ১৯৭৪ সালে সেই সব সম্পত্তিকেই অর্পিত সম্পত্তি ঘোষণা করা হয়।

২০০১ সালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন পাশ করা হলেও তা কার্যকর হয় ২০১২ সালে। এ আইন অনুযায়ী, অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক আইন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একই সাথে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ছাড়া অন্য আদালতে চলমান মামলা ‘অ্যাবেইট’ বা বাতিলের বিধানও ছিল।

রিটকারীদের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল যাতে অর্পিত সম্পত্তির মামলাগুলো বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ছাড়াও অন্য আদালতেও যাতে পরিচালনা করা যায়। জেলা প্রশাসকরা যাতে অর্পিত সম্পত্তি লিজ দিতে না পারেন সে আবেদনও করেছিল রিটকারীরা।

হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে তাতে রিটকারীদের আবেদন খারিজ করা হয়েছে। ফলে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের ধারাগুলো বহাল রাখা হয়েছে।

আইনজীবীরা বলছেন, এখন জেলা প্রশাসকরা অর্পিত সম্পত্তি লিজ দিতে পারবেন। আইনের এ ধারাটি আদলত বহাল রেখেছে।

অমিত দাশগুপ্ত বলেন,‘২০১২ সালে গেজেট প্রকাশের পর ট্রাইব্যুনালে অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে যেসব মামলা হয়েছে সেগুলো চলতে থাকবে। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল ছাড়া অন্য দেওয়ানি আদালতে যেসব মামলা হয়েছে ২০১২-এর আগে বা পরে, সেগুলো বাতিল হয়ে যাবে।’

দাশ গুপ্ত জানান, যদি কারো মামলা ট্রাইব্যুনাল এবং দেওয়ানি আদালত দুই জায়গাতেই থেকে থাকে তাহলে শুধু ট্রাইব্যুনালের মামলাটিই চলবে। অন্যটা বাতিল হয়ে যাবে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন কার্যকর হওয়ার পর দেওয়ানি আদালত থেকে মামলা ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করার জন্য সময় দেয়া হয়েছিল বলেও জানান তিনি।

এই রিট আবেদনের পরে পক্ষভুক্ত হয়েছিল ভূমি মন্ত্রনালয়। ভূমি মন্ত্রনালয়ের আইনজীবী ছিলেন মনজিল মোরশেদ।

মোরশেদ বলেন, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ছাড়া অন্য কোনো আদালতে চলমান থাকায় বাতিল হওয়া মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালে পরিচালিত হতে পারবে। সেক্ষেত্রে মামলাকারীকে ট্রাইব্যুনালে গিয়ে নতুন করে মামলা করতে হবে।

মোরশেদ বলেন, শুধু ২০১২ সালের আগ পর্যন্ত নয় বরং বর্তমানেও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ছাড়া অন্য কোনো দেওয়ানি আদালতে অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক মামলা করা বা পরিচালনা করা যাবে না। যেহেতু আইনটি ২০১২ সালে কার্যকর করা হয়েছিল তাই এখানে ওই বছরের আগে করা সব মামলা বাতিল হয়ে গেছে বলে বলা হচ্ছে।

অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন কার্যকর হওয়ার আগে অর্থাৎ ২০১২ সালের আগে যদি এ সম্পর্কিত কোনো মামলার রায় হয়ে থাকে তাহলে ওই রায়ই বহাল থাকবে। এক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হবে না।

কিন্তু যদি কোনো মামলার রায় হওয়ার পর তা আবার আপিল বিভাগে থেকে থাকে তাহলেও সেটি বাতিল হয়ে যাবে।

আইনজীবি মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘যেকোনো আদালতের মামলা বাতিল হয়ে যাবে।’

আইনের পটভূমি
১৯৬৫ থেকে ৬৯ সাল পযন্ত তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তানের যেসব হিন্দু নাগরিক ভারতে চলে গিয়েছিলেন তাদের যেসব সম্পত্তিকে ‘শত্রু সম্পত্তি’ ঘোষণা করে সরকার অধিগ্রহণ করেছিল।

এমন পরিস্থিতিতে ১৯৭৪ সালে সেই সব সম্পত্তিকেই ‘অর্পিত সম্পত্তি’ ঘোষণা করা হয়।

আইনজীবি মনজিল মোরশেদ বলেন, সরকারের দখলে থাকা অর্পিত সম্পত্তি বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষ নিজেদের বলে দাবি করে এবং মামলা করে।

‘স্বাধীনতার পর অর্পিত সম্পত্তি হওয়ার ব্যাপারে অনেক আলোচনা হয়েছে, অনেক কোয়েশ্চেন আসছে, অনেক হিন্দুরা বলছে যে আমরা এদেশে আছি আমার সম্পত্তি কেন ভেস্টেড প্রপার্টি হবে?’

এমন অবস্থায় সরকার জনগণের সম্পত্তি ফেরত দেয়ার বিষয়ে সরকার ২০০১ সালে একটি আইন করে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন নামে।

এ আইনের উদ্দেশ্যে ছিল জনগণের দাবি করা সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়া। এর অংশ হিসেবে সরকার দুটি গেজেট প্রকাশ করে। একটি ‘ক’ গেজেট, আরেকটি ‘খ’ গেজেট। ‘খ’ তালিকায় থাকার অর্থ হলো সরকার সেসব সম্পত্তি দাবিদারকে দিয়ে দেবে।

মোরশেদ বলেন,‘খ’ তালিকায় থাকার অর্থ হলো এই প্রপার্টিতে সরকারের কোনো দাবি নেই, শক্তি নেই, এবং সরকার দাবি করবে না এটা, এটা প্রত্যর্পণ হয়ে গেলো মালিকের নামে।

আর যেসব সম্পত্তি সরকারের দখলে থাকবে সেগুলো ‘ক’ তালিকার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। তবে কেউ যদি মনে করে যে ওই তালিকাভূক্ত সম্পত্তির মধ্যে তার সম্পত্তি আছে তাহলে সে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে সেই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করতে পারবে।

সে তার মালিকানা প্রমাণ করতে পারলে ট্রাইব্যুনাল থেকে ডিক্রি জারির মাধ্যমে সেটি তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
তবে এই প্রক্রিয়ার মধ্যবর্তী সময়ে অর্থাৎ কারো নামে ডিক্রি জারি হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই অর্পিত সম্পত্তি সরকার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে লিজ বা ইজারা দিতে পারবে।

এই বিষয়টি অর্পিত সম্পত্তি আইনের ১৪ ধারায় রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন না হওয়া পর্যন্ত সেই সম্পত্তি জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং তিনি প্রচলিত আইন অনুযায়ী সেগুলো ইজারা দিতে পারবেন। তবে এই ইজারা দেয়া সম্পত্তির দখলের জন্য ট্রাইব্যুনালের ডিক্রি থাকলে যার নামে ডিক্রি থাকবে তার কাছেই সম্পত্তির দখল বুঝিয়ে দিতে হবে।

তবে কোনো সম্পত্তি যদি সরকারের দখলে না থেকে কোনো ব্যক্তির দখলে থাকে তাহলে সে মামলাটিও বাতিল হবে এবং এটি পরিচালনা করতে হলে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে গিয়ে মামলা করতে হবে।

সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877